ঐতিহাসিক পটভূমি
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
অধিদপ্তরে রূপান্তর
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংযুক্ত বিভাগ।
বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের (১৮৮৫) অধীন ভূমির মালিকানা সম্পর্কিত ম্যাপ ও খতিয়ান প্রণয়ন কাজ পরিচালনার লক্ষ্যে “বোর্ড অব রেভিনিউ” এর নিয়ন্ত্রণাধীন“ভূমি রেকর্ড ও কৃষি” নামে দপ্তর সৃষ্টি হয় ১৮৮৪ সালে।
১৮৮৮ সালে “ভূমি রেকর্ড দপ্তর” নামে একটি স্বতন্ত্র দপ্তর গঠন করা হয়। তখন জরিপ কাজ “সার্ভে অব ইন্ডিয়ার” উপর ন্যস্থ ছিল।
১৯১৯ সালে জরিপের কাজ ভূমি রেকর্ড দপ্তরের উপর ন্যস্থ হয় এবং এটিভূমি রেকর্ড ও জরিপ পরিদপ্তর হিসাবে রূপান্তরিত হয়।
১৯৭৫ সালে এটি একটি অধিদপ্তরে উন্নিত করা হয় এবং অফিসের নাম করণ করা হয় “ ডিপার্টমেন্ট অব ল্যান্ড রেকর্ডস এন্ড সার্ভেস ”।
অধিদপ্তরে স্থানান্তর
সি.এস জরিপের সময় সার্ভে ও সেটেলমেন্ট বিভাগের প্রধান অফিস ছিল কোলকাতায়। দেশ বিভাগের পর অস্থায়ী ভাবে বরিশাল জেলার “ব্রাউনকম্পাউন্ড” জরিপ বিভাগের অফিস স্থাপন করা হয়। তখন সেটেলমেন্ট প্রেস ছিল রংপুরে।
পরবর্তীতে বরিশাল জেলা হতে জরিপ অফিস ঢাকার ওয়াজ ঘাট নবাব এষ্টটের বাড়িতে ও আরো কিছুদিন পর টিপুসুলতান রোডের(ওয়ারী) ভাড়া বাড়িতে এবং অধিদপ্তর ভবন নির্মাণ সমাপ্ত হলে ১৯৫৩ সালে বর্তমান স্থানে (তেজগাঁও) এ অধিদপ্তর টি স্থানান্তর করা হয়। এর কিছুদিন পর সেটেলমেন্ট প্রেস ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপের ইতিহাস
প্রাচীন হিন্দু যুগ :
এ সময়ে যিনি জঙ্গল কেটে জমি বানাতেন তিনি জমির মালিক হতেন। জমি হস্তান্তরের মালিকের স্বীকৃত অধিকার ছিল। কৃষি জমি কৃষকদের স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া হতো। গ্রাম ছিল ভূমি ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি। গ্রামের কয়েকটি পরিবার সমবায়ী ব্যবস্থায় ভূমি ব্যবহার করতেন। রাজা ছিল রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি। তিনি রাজ কর্মচারীদের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করতো। কোন জমিদার বা মধ্যস্বত্বভোগী ছিল না।
মুসলিম যুগ :
সুলতানী আমলে গ্রামীণ ব্যবস্থার পরিবর্তে জমিদারী ব্যবস্থায় রাজস্ব আদায় করা হতো। ইতিহাস হতে জানা যায় প্রথম জরিপ কাজ পরিচালনা করেন সেকান্দার শাহ ১৩৫৭ সাল থেকে ১৩৮৯ সাল পর্যমত। সেকান্দারী গজ নামক একটি নির্দিষ্ট পরিমাপকের মাধ্যমে এই জরিপ চালানো হয়। তিনি জমির উৎপাদিত ফসলের চার ভাগের এক ভাগ রাজস্ব ধার্য্য করেছিলেন। সম্রাট শের শাহ্ ১৫৪০-১৫৪৫ সাল পর্যন্ত ভূমি জরিপ করেন। ইহা ইতিহাসে উল্লেখ যোগ্য ভূমি জরিপ। এ সময় পাট্টা ও কবুলিয়ত প্রথার প্রবর্তন হয়। সম্রাট আকবর এর আমলে তার অর্থ মমএী টোডরমল জরিপ কাজ করেন । ভূমির দখলদারদের নিকট হতে তখন উৎপাদিত ফসলের তিন ভাগের একভাগ রাজস্ব আদায় করা হতো।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলার সুবেদার ছিলেন। তার আমলে এ অঞ্চলে জামা-ই-তামিল-তুমার নামে একটি জরিপ পরিচালিত হয়। এ জরিপে বাংলাকে ১৩টি চাকলা এবং ১৬৬০ টি পরগনায় বিভত্তু করা হয়।
ইংরেজ আমল :
১৭৬৩-১৭৮২ সালে নক্সাবিদ মেজর জন রেনেল শৃংখলা বদ্ধ পদ্ধতিতে জরিপ কাজ করেন। তিনি জরিপের মাধ্যমে নক্সা প্রস্তত করেন। ১৭৬৫ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বার্ষিক ছাব্বিশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের নিকট থেকে এদেশের ভুমি রাজস্ব আদায়ের কর্তৃত্ব লাভ করেন। তখন নায়েবগনের মাধমে রাজস্ব আদায় করা হতো।
১৭৬৯-১৭৭০ সাল (বাংলা ১১৭৬ সাল) এদেশে ভয়াভহ দুর্ভিক্ষ হয়। দুর্ভিক্ষে এদেশের একতৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। ১৭৭২ সালে ওয়ারেন্ট হেষ্টিংস পাঁচশালা বন্দোবস্ত চালু করেন। ১৭৯০ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ দশশালা বন্দোবস্ত চালু করেন। ১৭৯৩ সালে তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন। ফলে মধ্যস্বত্বভোগী ও জমিদার শ্রেনীর সৃষ্টি হয় এবং গন অসন্তোষ দেখা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৫৯ সালে রেন্ট এ্যাক্ট পাশ করা হয় এবং জমিদার ও প্রজাদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নের চেষ্টা করা হয়।
১৮৭৯ সালে রেন্ট কমিশন গঠন করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাশ করা হয়। এর ফলে কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্টা হয়। প্রজাদের অধিকার সম্বলিত খতিয়ান প্রণয়ন করা হয়। এ আইনকে রায়তদের মেগনাকার্টা বলা হয়। এ আইনের মাধ্যমে ক্যাডাষ্ট্রাল সার্ভে শুরত হয়। ১৯৩৮ সালে জমিদারী প্রথা বিলোপ করার জন ফ্লাউড কমিশন গঠন করা হয। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে জমিদারী অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ পাশ করা হয়
বিভিন্ন প্রকার জরিপ :-
র্যনাল জরিপঃ-
ইংরেজগণ ১৭৭৪ সনে প্রখ্যাত ভূগোলবিদ জেমস্ র্যনালকে উপমহাদেশের সার্ভেয়ার জেনারেল নিয়োগ করে উপমহাদেশের ভূমি জরিপের দায়িত্ব দেন । জেমস্ র্যনালকে ভারতীয় জরিপের পিতৃপুরতষ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি ১৭৮০ সনে Plan of the environs of the city of Dhaka প্রণয়ন করেন। অতঃপর বাংলা ও বিহারের ৮টি বিভাগের অনেক গুলো গুরত্বপূর্ণ স্থানের Index Map তৈরী করেন।
ত্রিগনোমেট্রিক্যাল জরিপঃ
১৮০২ সনে মিঃ উইলিয়াম ল্যাম্বটন এর নেতৃত্বে সমগ্র ভারতে ত্রিগনোমেট্রিক্যাল জরিপ শুরু হয়। ভবিষ্যতে সমগ্র ভারতে যাতে সঠিক ও নির্ভুল নক্সা প্রস্তত করা যায় সে লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকায় জি,টি, পিলার স্থাপনই এ জরিপের উদ্দেশ্য ছিল। সরেজমিনে সঠিক ত্রিভুজ অংকন করে ত্রিভুজের বাহু ব্যবহার দ্বারা একাধিক ত্রিভুজ অংকন ও প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে উক্ত জি,টি, পিলার স্থাপিত হয়েছিল বলে এ জরিপকে ত্রিগনোমেট্রিক্যাল জরিপ বলে।
থাকবাস্ত জরিপঃ-
জমিদার সীমানা সংত্রুামত বিরোধ মিমাংসার জন্য জমিদাররা ১৮৪৬ সাল পর্যমত থাকবাস্ত জরিপ নামক জরিপ কার্য পরিচালনা করেন।এর মাধ্যমে জমিদারী এলাকার সীমা নির্ধারন করা হয়। এ জরিপে ভূ-সম্পত্তি ও গ্রামগুলোর সীমানা পৃথক করনের মাধ্যমে চিহিুত করা হয়।
এ জরিপের উপর ভিত্তি করেই রাজস্ব জরিপ বা রেভিনিউ সার্ভে পরিচালনা করা হয়।
রাজস্ব জরিপঃ-
থাকবাস্ত জরিপে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে জমিদারী এলাকার আয়তন নির্ণয়ের জন্য ১৮৪৭ সাল থেকে ১৮৭৮ সাল পর্যমত এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এ জরিপকে প্রথম বৈজ্ঞানিক জরিপ বলা হয়। কারন এ জরিপ দক্ষ আমিনগণ দ্বারা পরিচালিত হয়। এ জরিপের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ জমিদারী এলাকার বাইরের ভূমিকে খাস ভূমি হিসেবে চিহিুত করা হয় এবং তা কালেক্টরের অধিনে ন্যাস্ত করা হয়। এ জরিপে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রস্তত করা হয়।কর্ণেল মিঃ স্মিথ এর অধীনে এ জরিপ পরিচালিত হয়।
খসড়া জরিপঃ-
থাকবাস্ত জরিপ ও রাজস্ব জরিপ পরিচালনাকালে যেসব ভূমি অস্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত করা হত সেগুলোর জন্য খসড়া জরিপের প্রচলন ছিল। একই সাথে যেসব এলাকায় স্থায়ীভাবে বন্দোবস্তকৃত ভূমিতে স্বত্ব নিয়ে বিরোধ বিদ্যমান ছিল এবং থাকবাস্ত জরিপের নক্সা যেখানে ছিলনা সেসব এলাকায় খসড়া জরিপ পরিচালিত হত ।
কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে থাকবাস্ত জরিপ বা রাজস্ব জরিপের অংশ ছাড়াও কখনও পৃথকভাবে এ জরিপ পরিচালিত হত। খসড়া জরিপের ১৬˝= ১ মাইল স্কেলে তৈরী হত। জরিপ কর্মীগণ ফিল্ডবুক ব্যবহার করতেন। ফিল্ডবুকে বিভিন্ন তথ্যাদি লিপিবদ্ধ করতেন। যেমন-তৌজি নম্বর, মালিকের নাম, দখলকারী রায়তের নাম ,দৈর্ঘ্য প্রসহ,ক্ষেত্রফল,মাটির বর্ণনা,উৎপাদিত ফসলের বর্ণনা ইত্যাদি।
ক্যাডাষ্টাল জরিপঃ-
১৮৭৫ সনে বৃুটিশ সরকার সার্ভে আইন পাশ করেন। কিমত স্বত্ব নির্ধারনের এ আইন যথেষ্ট না হওয়ায় ১৮৮৫ সনে সর্ব প্রথম বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাশ করা হয়। ১৮৮৮ সনে ভূমি রেকর্ড দপ্তর সৃস্টি করা হয় এবং কলিকাতার আলিপুরে এর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়। ১৮৮৮ সনেই ভূমি রেকর্ড দপ্তর সার্ভে অব ইন্ডিয়ার স্থায়তায় কক্সবাজার জেলার রামু থানায় কিসেতায়ার জরিপ ও খতিয়ান প্রনয়নের কাজ আরম্ব হয়। ইহা ১৮৯০ সনে অত্যমত সফলভাবে সমাপ্ত হয়। ইহাই ক্যাডাষ্ট্রাল জরিপ। এ সফলতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে চট্রগ্রাম জেলায় ১৮৯০ সনে ক্যাডাষ্ট্রাল সার্ভে (সি,এস) জরিপ শুরত হয় এবং ১৮৯৮ সনে সফলতার সঙ্গে সমাপ্ত হয়। এর পর সমগ্র বাংলাদেশে সি,এস জরিপ পরিচালিত হয় এবং ১৯৪০ সনে দিনাজপুর জেলার জরিপের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। উল্লেখ্য যে বৃহত্তর চট্রগ্রাম ও সিলেট জেলা তখন আসাম প্রদেশের অন্ত:র্ভুক্ত থাকায় এ অঞ্চলে সি,এস জরিপ পরিচালিত হয়নি।
এস এ পূর্ব সংশোধনী জরিপঃ-
দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে সি এস জরিপ চলে। এ সময়ের মধ্যে যে সকল এলাকায় প্রথম জরিপ হয়েছে; সেসকল ভুমির প্রকৃতি ও মালিকানার ব্যপক পরিবর্তন ঘটে। ফলে নতুন জরিপের প্রয়োজন অনুভুত হয়। এ অনুভুতি থেকেই ১৯৪০ সনে বৃহত্তর ফরিপুর ও বাকেরগঞ্জ জেলায় নতুন করে সংশোধনী জরিপ শুরত হয়। ইহাকে ইংরেজী Rivisional Survey এর সংক্ষিপ্ত নাম R.S জরিপ বলা হয়। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সন পর্যমত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ায় এ জরিপ কিছুদিন বন্ধ ছিল। ১৯৪৫ সনে ফরিদপুর জেলা এবং ১৯৫২ সনে বাকেরগঞ্জ জেলার সংশোধনী জরিপ শেষ হয় এবং খতিয়ান চুড়ান্ত প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে জরিমদারী হুকুম দখল ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ায় আর কোন জেলায় সংশোধনী জরিপ পরিচালিত হয়নি।
এস,এ জরিপঃ-
দেশ বিভাগের পর জমিদারী হুকুম দখল ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ সনের ১৬ ফেব্রতয়ারী পূর্ব বাংলার পার্লামেন্টে পাশ হয় এবং গভর্ণর জেনারেলের সম্মতি লাভের পর ১৯৫১ সনের ১৬ মে তারিখ ঢাকা গেজেটে প্রকাশিত হয়। এ আইনের মাধ্যমে জমিদারদের অধিভুক্ত সম্পত্তির মূল্য নির্ধারন করে ক্ষতিপুরন প্রদানের মাধ্যমে জমিদারী এস্টেটগুলো অধিগ্রহন করা হয় এবং প্রজার নামে খতিয়ান প্রণয়ন করে প্রজাস্বত্ব বলবৎ করা হয়। এ অপারেশনকেই এস এ জরিপ বলে।
এস,এ জরিপ ১৯৫৬ সনের ১৪ এপ্রিল শুরত হয় এবং ১৯৬৩ সনে শেষ হয়। এস এ জরিপের খতিয়ান ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত হয়নি এবং ইহা কোন মাঠ পর্যায়ের সরেজমিন জরিপ ছিল না। জেলা প্রশাসনের কর্মচারীগণ জমিদারদের কাচারিতে বসে পত্তন রেজিষ্টার দেখে এস,এ খতিয়ান প্রণয়ন করেন। এজন্য১৯৬৬ সনে পুনরায় সারাদেশে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক সংশোধনী জরিপ শুরত হয়; যা এখনও চলমান।
এস,এ পরবর্তী সংশোধনী জরিপঃ-
এস,এ জরিপ মাঠ পর্যায়ের সরেজমিন জরিপ ছিল না। এ জরিপের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল জমিদারী এষ্টেটগুলোকে অধিগ্রহন করা এবং দখলদার ভূমি মালিকদের সরাসরি সরকারের অধিনে নিয়ে আসা। জমিদারদের কাছারিতে বসে পত্তন রেজিষ্টার দেখে জেলা প্রশাসনের কর্মচারীগণ প্রজার নামে খতিয়ান খোলে। কাজেই এর বিশুদ্ধতা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তাই এস এ জরিপের পর পরই আর একটি সংশোধনী জরিপ শুরত কর হয়। ১৯৬৫-৬৬ সালে রাজশাহী জেলায় সংশোধনী জরিপ শুরত হয়। পরবর্তীতে বৃহত্তর ঢাকা, চট্রগ্রাম,কৃস্টিয়া,পাবনা ও ময়মসিংহ জেলায় এ জরিপ পরিচালিত হয়। বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলায় এ জরিপ এখনও চলমান।
দিয়ারা জরিপ কার্যক্রমঃ-
বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। এ দেশে প্রতিনিয়ত নদী ভাঙ্গনের ফলে বিসতীর্ণ এলাকা নদী বা সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। আবার কোথাও কোথাও নতুন চর জেগে ওঠে। এসব নদী ভাঙ্গন এলাকা জরিপ করার জন্য ১৯৬৩ সনে একটি স্থায়ী দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিস স্থাপন করা হয়। দরিয়া শব্দটি হতে দিয়ারা শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে।
মহানগর জরিপঃ-
সি এস, এস এ এবং আর এস এই তিন প্রকার জরিপ ছাড়াও ঢাকা মহানগরী এলাকাভুক্ত মৌজাসমুহে অতি সম্প্রতি একটি বিশেষ জরিপের মাধ্যমে মৌজা নক্সা ও স্বত্বলিপি প্রস্তত হয়েছে। ইহা মহানগরী জরিপ নামে পরিচিত। এই জরিপটিও একটি সংশোধনী জরিপ । তবে অধিক্ষেত্রভুক্ত সকল মৌজায় ক্যাডাষ্ট্রাল জরিপের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কেলে নতুন মৌজা ম্যাপ প্রস্তত করা হয়েছে বিধায় একে ক্যাডাষ্ট্রাল জরিপও বলা যায়। মহানগরী জরিপ শুধু ঢাকা মহানগর এলাকায় পরিচালিত হয়েছে।
জোনাল জরিপঃ-
১৯৮৪ সালে জোনাল জরিপ প্রবর্তন করা হয়। প্রত্যেক জেলায় এর একটি স্থায়ী কাঠামো রয়েছে। বর্তমানে ১৯টি জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস আছে।
পার্বত্য জেলাসমূহের জরিপঃ-
১৯৮৪ সালে একটি অধ্যাদেশ জারী করে এ অঞ্চলে জরিপ কাজ হাতে নেয়া হয় । কিমও উপজাতীয় অসন্তোষের কারনে সরকার জরিপ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তাই উক্ত এলাকায় জরিপ কাজ বাস্তবায়ন হয়নি।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপের প্রেক্ষাপট
প্রাচীন হিন্দু যুগঃ
এ সময়ে যিনি জঙ্গল গেটে জমি বানাতেন তিনি জমির মালিক হতেন।
কৃষি জমি কৃষকদের স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া হতো।
কোন জমিদার বা মধ্যস্বত্বভোগী ছিল না।
মুসলিম যুগঃ
সুলতানী আমলে গ্রামীণ ব্যবস্থার পরিবর্তে জমিদারী ব্যবস্থায় রাজস্ব আদায় করা হতো।
১৩৫৭-১৩৮৯ সালে সেকান্দার শাহ্ প্রথম জরিপ কাজ করেন। সেকান্দারী গজ ব্যবহার করে জরিপ করা হতো।
১৫৪০-১৫৪৫ সালে শের শাহ্ জরিপ কাজ করেন। উৎপাদিত ফসলের চার ভাগের এক ভাগ রাজস্ব আদায় করা হতো।
১৫৮২-১৫৮৭ সালে সম্রাট আকবরের অর্থ মন্ত্রী টোডরমল জরিপ কাজ করেন। উৎপাদিত ফসলের তিন ভাগের এক ভাগ রাজস্ব আদায় করা হতো।
ইংরেজ আমলঃ
১৭৬৩-১৭৮২ নকসাবিদ মেজর জন রেনেল সৃঙ্খলাবদ্ধ পদ্ধতিতে জরিপ কাজ করেন। তিনি জরিপের মাধ্যমে নকসা প্রস্ত্তত করেন।
o ১৭৬৫ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বার্ষিক ছাব্বিশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দিল্লির সম্রাট শাহআলম এর নিকট থেকে এদেশের ভূমি রাজস্ব আদায়ের কর্তৃত্ব লাভ করেন। নায়েবগণের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা হতো।
o ১৭৬৯-১৭৭০ সাল (বাংলা ১১৭৬ সাল) ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ হয়।
১৭৭২ সালে ওয়ারেন্ট হেস্টিংস পাঁচশালা বন্দোবস্ত চালু করেন।
১৭৯০ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশ দশশালা বন্দোবস্ত চালু করেন।
১৭৯৩ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন।
১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং গণ অসন্দোষ দেখা দেয়।
১৮৫৯ সালে রেন্ট এ্যাক্ট পাশ করা হয় এবং জমিদার এবং প্রজাদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করা হয়।
১৮৭৫ সালে সার্ভে আইন পাশ করা হয় সীমানা বিরোধ নিস্পত্তি ও জমি নকসা তৈরী করার লক্ষ্যে।
১৮৭৯ সালে রেন্ট কমিশন গঠন করা হয়। তার প্রেক্ষিতে ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাশ করা হয়। এর ফলে কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। প্রজাদের অধিকার সম্বলিত খতিয়ান প্রণয়ন করা হয়। এ আইনকে রায়তদের মেগনাকাট্টা বলা হয়। এ আইনের মাধ্যমে ক্যাডাষ্ট্রাল সার্ভে শুরু হয়।
১৯৩৮ সালে ফ্লাউড কমিশন গঠন করা হয়। জমিদারী প্রথা বিলোপ করার জন্য। এ প্রেক্ষিতে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্ব্ত্ব আইন ১৯৫০ পাশ করা হয়।